এমভি আবদুল্লাহর হাইজ্যাকিং: একটি ফোন কল প্রথম ইফতারের সমস্ত আনন্দকে ভেঙে দেয়

প্রকাশিত: ১০:১২ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৩, ২০২৪
  • প্রধান কর্মকর্তা আতিকের মা ইফতার করতে গিয়ে ছেলের ফোন পান
  • আতিক পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সদস্য
  • ফোন কলের পর পরিবার একটি ভয়েস মেসেজ পায়

বাংলাদেশের পতাকাবাহী পণ্যবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর প্রধান কর্মকর্তা মোঃ আতিক উল্লাহ খানের মা শাহানুর বেগম মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তার প্রিয় ছেলের কাছ থেকে একটি ফোন কল পান যখন তাদের পরিবার রমজানের প্রথম দিনে ইফতার উপভোগ করছিল।

মর্মান্তিক ফোনকল আতিকের পরিবারের সকল আনন্দকে ভেঙ্গে দিয়েছে।

মঙ্গলবার ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের একটি দল কর্তৃক ছিনতাই করা বাংলাদেশী কার্গো জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ জন ক্রু সদস্যের মধ্যে আতিক একজন জিম্মি।

সোমালিয়ান জলদস্যুরা ভারত মহাসাগরে জাহাজটি হাইজ্যাক করার পর তিনি তার মায়ের কাছে ফোন করতে সক্ষম হন।

২৩ জন নাবিক-ক্রুর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা উদ্বেগের মধ্যে প্রতিটি মুহূর্ত দিন।

আতিকের বাড়ি চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালি থানার নন্দনকানন রথের পুকুরপাড় এলাকার সুবর্ণ ফরিদ টাওয়ারের তৃতীয় তলায়।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে জিম্মি করার খবরে উদ্বিগ্ন স্বজনরা।

তিন মাস আগে তিনি তার পরিবারের সদস্যদের বিদায় নিয়ে জাহাজে যান। ছয় মাস পর ফেরার কথা ছিল তার।

এরই মধ্যে তাকে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি করে রাখা হয়েছে বলে জানান তার মা।

বাড়িতে পরিদর্শনকালে আতিক উল্লাহর বৃদ্ধ মা শাহানুর বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি যখন ইফতার করতে বসলাম, তখন আমার ছেলে ফোন করে আমাদের জানায় যে তাদের জাহাজে সোমালিয়ান হামলা করেছে। জলদস্যু। তিনি আমাদের বলেছেন যে তাদের উপর যে কোন সময় হামলা হতে পারে। জলদস্যুরা তাদের কেবিনে বন্দুকের মুখে জিম্মি করে। কিন্তু কেউ আহত হয়নি।”

“টেনশন করবেন না। আমাদের জন্য আরও দোয়া করুন, “আতিক তার মাকে বলল।

শাহানুর বেগম জানান, ফোন কলের ২০ মিনিট পর তার ছেলে ভয়েস মেসেজ পাঠায়।

“আমাদের সবার কাছ থেকে সব মোবাইল কেড়ে নেওয়া হয়েছে। তারা আমারও নিয়ে যাবে। আমি আপনার সাথে আর যোগাযোগ করতে সক্ষম হব না। তারা আমাদের সোমালিয়ায় তাদের আস্তানায় নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে পৌঁছাতে আড়াই দিন সময় লাগতে পারে,” ভয়েস বার্তাটি বলেছে।

পরিবার যেকোনো মূল্যে আতিকের মুক্তি চায়
“আমরা আমার ছেলে এবং অন্যান্য নাবিকদের মুক্তি চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আমার ছেলেকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিন। এটাই আমাদের একমাত্র চাওয়া। মালিকদেরও তাদের মুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। আমি আমার ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে চাই,” বলেন শাহানুর বেগম।

আতিকের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরকল ইউনিয়নে।

তার তিন মেয়ে। তাদের মধ্যে বড় মেয়ে ইয়াশা ফাতেমা তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী, মেয়ে উমাইজা মাহাবিন প্রথম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট মেয়ে খাদিজা মাহাবিন দুই বছর।

শাহানুর বেগম বলেন, “আমার পাঁচ মেয়ে ও দুই ছেলে। দুই ছেলের মধ্যে আতিক বড়। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। আমার পুরো পরিবার তার উপার্জনের উপর নির্ভর করে। 2017 সালে তার বাবা মারা যান। তারপর থেকে আতিক পরিবারের নিয়ন্ত্রণ নেন।”

আতিলের স্ত্রী মীনা আজমাইন পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা।

স্বামীর বিপদের কথা শুনে তিনি আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। মঙ্গলবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। স্বামীর বিপদের কথা ভেবে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন মীনা আজমাইন।

আতিক উল্লাহর বড় মেয়ে ইয়াশা ফাতিমা বলেন, “আমার বাবা আমাকে প্রতিদিন ফোন করতেন। মঙ্গলবার থেকে তিনি কোনো ফোন করেননি। আমার বাবা খুব বিপদে আছেন। আমি চাই আমার বাবা শীঘ্রই আমাদের কাছে ফিরে আসবেন।”

তার ছোট ভাই মোহাম্মদ আবদুল্লাহ খান আসিফ জানান, তার বড় ভাই জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার খবর শুনে দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে তাদের।

“যেভাবেই হোক, আমরা দাবি করছি আমার ভাই যেন তাড়াতাড়ি আমাদের কাছে ফিরে আসে। শিগগিরই জাহাজের মালিক উদ্যোগ নেবেন বলে আশা করছি। মঙ্গলবার কয়েকটি অডিও কণ্ঠ পাঠিয়েছেন তিনি। সেখানে তিনি জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার কথা বলেন। তিনি দোয়া চেয়েছেন,” বলেন আবদুল্লাহ।

এদিকে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএমওএ) সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “আমরা জাহাজ মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছি। আমরা চাই যত দ্রুত সম্ভব জিম্মি নাবিকদের বন্দিদশা থেকে মুক্তি দেওয়া হোক। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও 23 জনের স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।”

২৩ জন ক্রু সদস্যের মধ্যে চট্টগ্রামের ১১ জন, নোয়াখালীর দুজন এবং নাটোর, নওগাঁ, ফেনী, ফরিদপুর, লক্ষ্মীপুর, বরিশাল, নেত্রকোনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও খুলনার একজন করে রয়েছেন।

এর আগে মঙ্গলবার, মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে কয়লা বহনকারী জাহাজটি দুপুরের দিকে হামলার শিকার হয়।

এমভি আবদুল্লাহর মালিকানাধীন এসআর শিপিং – চট্টগ্রাম ভিত্তিক কবির স্টিল রি-রোলিং মিলস (কেএসআরএম) লিমিটেডের একটি বোন কোম্পানি।

কেএসআরএমের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, সব ক্রু সদস্য জলদস্যুদের হাতে জিম্মি।