নতুন মন্ত্রিসভা নিয়ে নতুন সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা

প্রকাশিত: ১২:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১১, ২০২৪
  • বাদ পড়েছেন ১৫ মন্ত্রী, ১৩ জন প্রতিমন্ত্রী, দুই উপমন্ত্রী
  • শপথ নেবেন ২৫ মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী
  • নতুন মন্ত্রিসভায় দুই টেকনোক্র্যাট
  • বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন বেশ কয়েকজন বড় নাম

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর প্রায় সম্পূর্ণ নতুন মন্ত্রিসভা গঠন করে তার সরকারের সঙ্গে নতুন যাত্রা শুরু করতে চলেছেন। ৪৮ মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে ১৫ মন্ত্রী,১৩ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুইজন উপমন্ত্রী সহ মন্ত্রিসভার ৩০ জন বর্তমান সদস্যকে বদলি করা হয়েছে।

এবার শেখ হাসিনা তার বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে মোমেন, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির মতো কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে বাদ দিয়েছেন।

বাদ পড়া মন্ত্রীদের তালিকায় রয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী এসএম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. উদ্দিন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈ সিং, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।

বুধবার সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ঘোষিত নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের তালিকায় তাদের নাম ছিল না।

এ ছাড়া বর্তমান মন্ত্রিসভার ১৩ প্রতিমন্ত্রী ও দুই উপমন্ত্রী নতুন তালিকায় স্থান পাননি।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মোঃ জাহিদ আহসান রাসেল, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোঃ শাহরিয়ার আলম, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ। , মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরাও এবার মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেন।

তালিকায় আরও রয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম।

নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করলে তিন প্রতিমন্ত্রীকে বাদ দেওয়া হয়, যার মধ্যে ছিলেন সংস্কৃতিবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন। .

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বেসামরিক বিমান পরিবহন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মোঃ এনামুর রহমান এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হন।

এর আগে কিছু বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে তথ্য প্রতিমন্ত্রী ড. মুরাদ হাসান তার দায়িত্ব হারান।

একাদশ জাতীয় সংসদের এই সাত প্রতিমন্ত্রীর নামও নতুন মন্ত্রিসভার তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।

 

কে থাকছেন এই নতুন মন্ত্রিসভায়?

বৃহস্পতিবার নতুন মন্ত্রিসভার শপথ নেওয়ার সময় বুধবার সন্ধ্যা থেকেই নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ফোন পাচ্ছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, এবার নতুন মন্ত্রিসভায় ৩৬ সদস্য থাকবে।

এই মন্ত্রিসভায় ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী থাকবেন। তাদের মধ্যে এবার দুইজন টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী থাকবেন।

মন্ত্রীরা হলেন- একেএম মোজাম্মেল হক (গাজীপুর-১), ওবায়দুল কাদের (নোয়াখালী-৫), নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন (নরসিংদী-৪), আসাদুজ্জামান খান (ঢাকা-১২), ডাঃ দীপু মনি (চাঁদপুর-৩), মোঃ তাজুল ইসলাম। ইসলাম (কুমিল্লা-৯), মোঃ ফারুক খান (গোপালগঞ্জ-১), আবুল হাসান মাহমুদ আলী (দিনাজপুর-৪), আনিসুল হক (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪), হাসান মাহমুদ (চট্টগ্রাম-৭), মোঃ আব্দুস শহীদ (মৌলভীবাজার-৪)। , সাধন চন্দ্র মজুমদার (নওগাঁ-১), উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩), মো আবদুর রহমান (ফরিদপুর-১), নারায়ণ চন্দ্র (খুলনা-৫), আবদুস সালাম (ময়মনসিংহ-৯), মহিবুল হাসান চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১)। ৯), ফরহাদ হোসেন (মেহেরপুর-১), ফরিদুল হক খান (জামালপুর-২), মোঃ জিল্লুল হাকিম (রাজবাড়ী-২), সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), জাহাঙ্গীর কবির নানক (ঢাকা-১৩), নাজমুল হাসান পাপন। (কিশোরগঞ্জ-৬), স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং ডঃ সামন্ত লাল সেন।

প্রতিমন্ত্রীরা হলেন- সিমিন হোসেন রিমি (গাজীপুর-৪), নসরুল হামিদ (ঢাকা-৩), জুনায়েদ আহমেদ পলক (নাটোর-৩), মোহাম্মদ এ আরাফাত (ঢাকা-১৭), মো. মহিবুর রহমান (পটুয়াখালী-৪), খালিদ মো. মাহমুদ চৌধুরী (দিনাজপুর-২), জাহিদ ফারুক (বরিশাল-৫), কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা (খাগড়াছড়ি), রুমানা আলী (গাজীপুর-৩), শফিকুর রহমান চৌধুরী (সিলেট-২), আহসানুল ইসলাম টিটু (টাঙ্গাইল-৬)।

 

তরতাজা মুখ কারা?

বৃহস্পতিবার শপথ নেওয়া আসন্ন মন্ত্রিসভায় বেশ কিছু নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত হবে। মন্ত্রিসভায় মন্ত্রীদের তালিকায় নয়টি নতুন মুখ থাকবে। তারা হলেন মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুস সালাম, নাজমুল হাসান পাপন, আব্দুর রহমান, মোঃ আব্দুস শহীদ, ওবায়দুল মুক্তাদির চৌধুরী, আব্দুস সালাম, মোঃ জিল্লুল হাকিম ও সামন্ত লাল সেন।

এদিকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেবেন ছয়জন নতুন মুখ। তারা হলেন বেগম সিমিন হোসেন (রিমি), মোহাম্মদ এ আরাফাত, মোঃ মহিবুর রহমান, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, বেগম রুমানা আলী ও আহসানুল ইসলাম টিটু।

সাবের হোসেন চৌধুরী ১৯৯৬ সালের শেখ হাসিনার সরকারে মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং জাহাঙ্গীর কবির নানক  ২০০৮ সালের সরকারে ছিলেন; কয়েক বছর পর তারা আবার মন্ত্রিসভায় ফিরেছে।

 

কারা পদোন্নতি পেয়েছেন?

বর্তমান মন্ত্রিসভা থেকে দুই প্রতিমন্ত্রী ও একজন উপমন্ত্রী পূর্ণমন্ত্রী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন এবং তারা হলেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান এবং উপ-শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

 

দুই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী

নতুন মন্ত্রিসভার তালিকায় দুই টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী রয়েছেন; একজন হলেন ইয়াফেস ওসমান, যিনি পূর্বে টেকনোক্র্যাট হিসাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং নতুন নাম ডাঃ সামন্ত লাল সেন, যিনি বার্ন ইনস্টিটিউট হাসপাতালের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

এই নতুন মন্ত্রিসভায় বাদ পড়েছেন অপর দুই বর্তমান টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী মোস্তাফা জাব্বার এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।

 

বৃহস্পতিবার শপথ অনুষ্ঠান’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠান বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন বলে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মোঃ জয়নাল আবেদীন নিশ্চিত করেছেন।

সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে মন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানের তদারকি করবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন।

অনুষ্ঠানে প্রায় এক হাজার অতিথি ও গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।

৭ জানুয়ারির নির্বাচনে, ক্ষমতাসীন দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২২২টি আসন পায়, জাতীয় পার্টি ১১টি আসনে জয়লাভ করে এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৬২টি আসন পায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) একটি করে আসন পেয়েছে। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিও একটি আসনে জয়ী হয়েছে।

মঙ্গলবার ২৯৮ জন সংসদ সদস্যের তালিকাসহ গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন।