হলমার্ক ঋণ কেলেঙ্কারির রায় ২৮ ফেব্রুয়ারি

প্রকাশিত: ১১:৩৯ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৯, ২০২৪
  • প্রায় চার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে
  • দুদক পৃথক ৪০টি মামলা করেছে

২০১০-১২ সালে সোনালী ব্যাংকের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে বহুল আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির মামলায় ঢাকার একটি আদালত আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করবে।

এই মামলায় অস্তিত্বহীন ম্যাক্স স্পিনিং মিলের নামে প্রায় ৫২৬ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করা হয়েছে এবং ১০.৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে ১৯ জনের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে ঢাকার প্রথম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবুল কাশেম রোববার এ তারিখ ধার্য করেন।

দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বলেছেন, আদালত ২৭ মার্চ, ২০১৬ তারিখে আসামিদের অভিযুক্ত করে এবং গত আট বছরে মোট ৮১ জন সাক্ষীর মধ্যে ৫৭ জনের সাক্ষ্য রেকর্ড করে।

২০১২ সালে কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর দুদক তদন্ত শেষে ৪০টি পৃথক মামলা করে। এর মধ্যে ৩৮টি ফান্ডেড কেস এবং ২ টি নন-ফান্ডেড কেস।

 

আসামি কারা?
বর্তমানে কারাগারে থাকা আসামিদের মধ্যে হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, তার স্ত্রী ও কোম্পানির চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ, সোনালী ব্যাংকের হেড অফিসের জেনারেল ম্যানেজার মীর মহিদুর রহমান, ডিজিএম মোঃ সফিজউদ্দিন আহমেদ, ডিএমডি মাইনুল হক (বর্তমানে) রয়েছেন। ওএসডি), এজিএম মোঃ কামরুল হোসেন খান (সাসপেন্ড) ও নকশী নেটের এমডি আব্দুল মালেক।

এছাড়া বরখাস্তকৃত দুই ডিজিএম শেখ আলতাফ হোসেন ও সাভারের তেতুলঝোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সরকার জামিনে রয়েছেন।

পলাতক অন্য আসামিরা হলেন প্যারাগন গ্রুপের এমডি সাইফুল ইসলাম রাজা, সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের জিএম ননী গোপাল নাথ (বর্তমানে ওএসডি), প্রধান কার্যালয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবির, সহকারী উপ-মহাব্যবস্থাপক মো: সাইফুল হাসান, নির্বাহী কর্মকর্তা আবদুল মতিন, ম্যাক্স স্পিনিং মিলসের মালিক মো. মীর জাকারিয়া, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের পরিচালক তসলিম হাসান, সোনালী ব্যাংকের ডিএমডি (ওএসডি) মোঃ আতিকুর রহমান এবং সোনালী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখার বর্তমান সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার মেহেরুন্নেসা মরিয়ম।

ব্যাংকটির সাবেক এমডি ও ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ কেলেঙ্কারির মাস্টারমাইন্ড হুমায়ুন কবির বিদেশে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন।

 

আইন যা বলে
অভিযুক্তদের দণ্ডবিধির ৪২০/৪০৬/৪০৯ ধারা এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং ২০১২ সালের মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ধারা ৪ (২) এর অধীনে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় প্রতারণার জন্য সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড, ৪০৬ ধারায় ৩ বছরের ফৌজদারি বিশ্বাসভঙ্গের জন্য এবং ৪০৯ ধারায় একজন সরকারী কর্মচারীর দ্বারা অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের জন্য সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ৪ (২) ধারায় সর্বোচ্চ ১২ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।

 

এটা কিভাবে উদ্ঘাটিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা হলমার্ক গ্রুপ এবং অন্য পাঁচটি কোম্পানিকে ২০১০ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে জাল কাগজপত্রের ভিত্তিতে ৩ হাজার ৫৪৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে হলমার্ক গ্রুপ একাই ২,৬৮৬.১৪ কোটি টাকা পাচার করেছে।

দেশি-বিদেশি ৪০টি ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে কোম্পানিটি আরও টাকা উত্তোলন করেছে। এর মধ্যে ২০১২ সালে প্রথম জালিয়াতির অভিযোগের পর মাত্র ৫৬৭.৪৭ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছিল।

তখন পর্যন্ত এটি ছিল দেশের সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারি। ২০১২ সালের ৮ অক্টোবর গ্রুপের এমডি তানভীর মাহমুদকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার স্ত্রী এবং কোম্পানি ও ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও গ্রেপ্তার করে পুলিশ, কিন্তু প্রতারিত টাকা উদ্ধার করতে পারেনি।

হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলাম প্রতিমাসে ১০০ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে ২০১৩ সালের আগস্টে জামিন পান। তিনি আদেশ পালনে ব্যর্থ হওয়ার পর, আদালত ১৪ জুলাই, ২০১৯ তারিখে তার জামিন বাতিল করে এবং তাকে আবার কারাগারে পাঠায়।

 

এক মামলায় জেল খাটছেন জেসমিন

১১ জুলাই, ২০১৮ , হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামকে তার সম্পদের বিবরণী দাখিল না করায় দুদকের করা একটি মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তাকে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

দুদক মামলার তদন্তকালে ওই দম্পতির বিপুল অঘোষিত সম্পদের তথ্য পায় এবং জেসমিনকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে বলে। তিনি তা করতে ব্যর্থ হওয়ার পর, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৩ তারিখে দুর্নীতিবিরোধী নজরদারি মামলাটি দায়ের করে।