ঢাকা বিভাগ: ৩১ আসনে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

প্রকাশিত: ১০:৩৯ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৭, ২০২৪
  • ঢাকা বিভাগে মোট ৭০টি

কম ভোটার উপস্থিতির উদ্বেগের মধ্যে বাংলাদেশের ১২তম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ঢাকা বিভাগের ৭০টি আসনের মধ্যে ৩১টি আসনে সংসদ নির্বাচনে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকা জেলা

দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১ আসন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে এ আসন থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান সংসদ সদস্য এবং প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী সালমা ইসলাম, যিনি ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে একই আসনে জয়ী হন।

এছাড়া তৃণমূল বিএনপি থেকে একজনসহ আরও পাঁচজন প্রার্থী রয়েছেন।

তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকা ও লাঙলের মধ্যে।

ঢাকা-৪ আসনে সংসদ সদস্য সানজিদা খানম আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আবু হোসেন বাবলা, যিনি ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে জয়লাভ করেছিলেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাবেক সহকারী একান্ত সচিব মোঃ আওলাদ হোসেন এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী।

সুতরাং একটি ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে যেখানে এখানে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১১।

ঢাকা-১৮ আসনে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী না থাকায় ক্ষমতাসীন দল জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে।

প্রথমবারের মতো জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের স্ত্রী শরীফা কাদের।

ঢাকা উত্তর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক মোঃ খসরু চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপি ও বিএনএফসহ আরও ছয়টি দল এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।

ঢাকা-১৯ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের বিপরীতে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি তালুকদার মোহাম্মদ তৌহিদ জং মুরাদ।

গাজীপুর

গাজীপুর-১ আসনে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগ নেতা কাজী আলিম উদ্দিন ও যুবলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

গাজীপুর-৩ আসনে দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী মোঃ রহমত আলীর মেয়ে রুমানা আলী এখন নৌকার প্রার্থী।

সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী।

নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন গোলাম দস্তগীর গাজী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তৃণমূল বিএনপির সাধারণ সম্পাদক তৈমুর আলম খন্দকার। স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজান ভূঁইয়াও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনবারের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা নজরুল ইসলাম বাবু। আরেক সাবেক ছাত্রনেতা আলমগীর শিকদার লোটন স্বতন্ত্র প্রার্থী। লোটনের বাবা এক সময় এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। এছাড়া তৃণমূল বিএনপি থেকে সংসদে লড়ছেন সাবেক বিএনপি নেতা কে এম আবু হানিফ হৃদয়।

নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কায়সার হাসনাত। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী লিয়াকত হোসেন খোকা, যিনি গত দুই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে জয়ী হয়েছেন।

এ আসনে বিকল্পধারা বাংলাদেশ ও বিএনপি’র প্রার্থীসহ মোট প্রার্থীর সংখ্যা নয়জন।

ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান।

নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেন। এখানে তৃণমূল বিএনপি থেকে প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন অ্যাডভোকেট আলী হোসেন।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা ও বন্দর উপজেলা নিয়ে গঠিত নারায়ণগঞ্জ-৫ আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দিচ্ছে না। সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির প্রার্থী। এখানে লড়াই হবে মূলত জাতীয় পার্টি ও তৃণমূল বিএনপির মধ্যে।

নরসিংদী
নরসিংদী-৩ আসনে চতুর্থবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম হিরো, যিনি এর আগে তিনবার বিজয়ী হয়েছেন। তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী ও নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল। কামরুলের বড় ভাই প্রয়াত লোকমান হোসেন পৌরসভার মেয়র হিসেবেও জনপ্রিয় ছিলেন। কামরুল বর্তমানে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি।

নরসিংদী-৪ (বেলাবো-মনোহরদী) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন।

এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মনোহরদী উপজেলা পরিষদের পাঁচবারের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান।

ফরিদপুর
ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত সমর্থন রয়েছে। ২০১৪ সালের পর আবারও নৌকার প্রার্থী হয়েছেন দুইবারের এমপি আবদুর রহমান। এবার বিএনপির প্রার্থী হয়েছেন শাহ মোহাম্মদ আবু জাফর। আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুর রহমান দোলনও এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে আসল লড়াই হবে আবদুর রহমান ও শাহ মোহাম্মদ আবু জাফরের মধ্যে।

ফরিদপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন প্রয়াত সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে বর্তমান সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু।

এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যাডভোকেট জামাল হোসেন মিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং বসুন্ধরা গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মো.

ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শামীম হকের প্রতিদ্বন্দ্বী এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি একে আজাদ।

শামীম হক ফরিদপুর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং এ কে আজাদ জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য।

ফরিদপুর-৪ আসনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী (নিক্সন) স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। দুইবারই তিনি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরুল্লাহকে পরাজিত করেন। জাফরুল্লাহ এবারও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বেন।

মাদারীপুর
সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি তাহমিনা বেগম আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বর্তমান সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান মিয়ার বিরুদ্ধে শক্ত প্রার্থী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

মানিকগঞ্জ
মানিকগঞ্জ-১ আসনে জাতীয় পার্টির জহিরুল আলম রুবেলের জন্য ছেড়েছে আওয়ামী লীগ। এখানে সবচেয়ে শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সালাহউদ্দিন মাহমুদ জাহিদ।

এ এলাকায় সালাহউদ্দিন মাহমুদের জনপ্রিয়তা বেশি হওয়ায় তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে কঠিন লড়াই দিতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে।

সিংগাইর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গায়িকা মমতাজ বেগম মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে টানা তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন যেখানে তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হচ্ছে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী দেওয়ান সফিউল আরেফিন টুটুল ও দেওয়ান জাহিদ আহমেদ টুলুর সঙ্গে।

টাঙ্গাইল
আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা ও কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আবদুর রাজ্জাক টাঙ্গাইল-১ থেকে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আনোয়ারুল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

টাঙ্গাইল-২ আসনে এমপি তানভীর হাসান (ছোটো মনির) এখন নৌকার প্রার্থী। উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা পরিষদের তিনবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ইউনুস ইসলাম তালুকদার ঠান্ডু তাকে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

টাঙ্গাইল-৩ আসনে আওয়ামী লীগের নতুন প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন ডাঃ কামরুল হাসান খান। আওয়ামী লীগ নেতা আমানুর রহমান খান রানা স্বতন্ত্র প্রার্থী। দুজনের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

টাঙ্গাইল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোজাহেরুল ইসলাম তালুকদার। এ আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী স্বতন্ত্র।

টাঙ্গাইল-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী মামুনুর রশিদ। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য খন্দকার আহসান হাবীব স্বতন্ত্র প্রার্থী।

টাঙ্গাইল-৬ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহসানুল ইসলাম টিটু। উপজেলা বিএনপির সদস্য খন্দকার ওয়াহিদ মুরাদ স্বতন্ত্র হিসেবে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে নির্বাচন করছেন।

২০০১ সাল থেকে টাঙ্গাইল-৭ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে।

আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মীর এনায়েত হোসেন মন্টুও এখানে শক্তিশালী প্রার্থী।

টাঙ্গাইল-৮ আসনে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী, নৌকায় রয়েছেন অনুপম শাহজাহান জয়। এ আসনে ভোটার উপস্থিতি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জ-২ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল কাহার আকন্দের সঙ্গে ত্রিমুখী লড়াই হবে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী- মেজর আখতারুজ্জামান ও সোহরাব হোসেনের।

শরীয়তপুরশরীয়তপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খালেদ শওকত আলী।

শওকত আলী সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর ছেলে।

আমাদের প্রতিবেদক শামীমা রিতা এবং জেলা সংবাদদাতা আরিফুল ইসলাম সাব্বির, রাশেদুল হাসান কাজল, আবদুল্লাহ আল নুমান এবং রায়হানুল ইসলাম আকন্দ এই প্রতিবেদনে অবদান রেখেছেন।